অনলাইন লেনদেন এর মাধ্যমসমূহ
সাধারণভাবে আমরা অনলাইন লেনদেন বলতে বুঝি যে লেনদেনগুলো অনলাইনে হয়। কিন্তু সেখানেও বিষয়টা একলাইনে বলার মতো নয়। বা খুব সহজ সমীকরণ নয়। অনলাইনে লেনেদেনের যেমন বিভিন্ন উপায় আছে। তেমনি আছে বিভিন্ন মাধ্যম। আমরা আমরা সেসব ভার্চুয়াল মানি নিয়ে কথা বলব।
ইলেকট্রনিক চেক বা ই-চেক
ই-চেক হলো কাগজের ব্যাংক চেক এর একটি ইলেকট্রনিক বা সফট ভার্সন যা দিয়ে অনলাইনে পেমেন্ট দেয়া যায়। কেউ চাইলে ই-চেকের মাধ্যমে অন্য ব্যাংকে বা অন্য একাউন্টে পেমেন্ট দিতে পারে। কিছু ইনফরমেশন শেয়ারের মাধ্যমেই ই-চেক এর পেমেন্ট হয়ে থাকে। যেমন, প্রেরকের ব্যাংক রাউটিং নাম্বার, ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার, একাউন্ট নাম ইত্যাদি প্রয়োজন হয়।
ই-মানি
ই-মানি, ইলেকট্রনিক মানি বা বৈদ্যুতিক টাকা হলো একটি আর্থিক মূল্য বহনকারী যাতে এমবেডেড মাইক্রোপ্রসেসর রয়েছে। ই-মানি যার বিপরীতে অর্থসঞ্চিত থাকে এবং কার্ডটি সে রেকড ধারণ করে। ই-মানির আরেকটি ফরম্যাট হলো নেটওয়ার্ক মানি। এতে সফটওয়ারের মাধ্যমে অনলাইনে মূল্য বিনিময় করা যায়। ইলেকট্রনিক মানির বিপরীতে ব্যাংক এর অধিকারীকে নির্দিষ্ট ও উল্লেখিত পরিমাণ অর্থপ্রদানে প্রতিশ্রুত থাকে। যেমন ব্যাংক ডিপোজিট, ইএফটি ও অন্যান্য ডিজিটাল কারেন্সি।
ডিজিটাল কারেন্সি
ই-মানি ও ডিজিটাল কারেন্সির মধ্যে পার্থক্য হলো ই-মানে তার উল্লেখিত কারেন্সি মূল্য পরিবর্তন করতে পারেনা। কিন্তু ডিজিটাল মুদ্রা কোনো নির্দিষ্ট মুদ্রা বা কারেন্সির সমতুল্য নয়। সহজ কথা হলো সব ডিজিটাল কারেন্সি হলো ই-মানি, কিন্তু সব ই-মানি ডিজিটাল কারেন্সি নয়। বর্তমানে ডিজিটাল কারেন্সি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছি। আমাদের যেমন টাকা, ভারতের যেমন রুপি, আমারেকার যেমন ডলার তেমনি ডিজিটাল কারেন্সির ভিন্ন নাম রয়েছে। যেখানে ই-মানি বিভিন্ন দেশের কারেন্সিতে হয়। সেখানে ডিজিটাল কারেন্সি আসলে স্বতন্ত্র একটা কারেন্সি। যেমনঃ বিটকয়েন একটি ডিজিটাল মুদ্রা, যা ভার্চুয়াল মুদ্রার অন্য একটি রূপ। বিটকয়েন এবং এর বিকল্পগুলি ক্রিপ্টোগ্রাফিক অ্যালগরিদম ভিত্তি করে উদিত, তাই এই ধরনের ভার্চুয়াল মুদ্রাসমূহকে ক্রিপ্টোকারেন্সিও বলা হয়। এক কথায় বলতে গেলে বিটকয়েন হলো একটি ডিজিটাল ক্রিপটো কারেন্সি যা ক্রিপটোগ্রাফির একটি অংশ। ক্রিপটোগ্রাফ হলো এমন একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, যেটা আমাদের ব্যক্তিগত বার্তাগুলোকে তৃতীয় পক্ষ বা সর্বসাধারনের হাত থেকে রক্ষা করে।
তাহলে ক্রিপটো কারেন্সির অর্থ দাড়াচ্ছে, এটি এমন একটি নিরাপদ অনলাইন লেনদেন ব্যবস্থা যা সকল প্রকার তৃতীয় মাধ্যম থেকে আমাদের রক্ষা করে। যেটা আমাদের পরিচিত পেপাল, বিকাশ বা ডাচ্ বাংলার মত কোন ব্যাংক পারে না।
ইএফটি:
ইএফটি বা ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার অর্থাৎ বৈদ্যুতিন রাশি স্থানান্তর ব্যবস্থা দ্বারা এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অর্থ পরিশোধ করেন। প্রেরক যখন ব্যাংকের ব্যাংকের মাধ্যমে নগদে পাওনা মেটাতে নিজের ব্যাংক হিসেব থেকে সরাসরি প্রাপকের প্রাপকের ব্যাংক হিসেবে অর্থ স্থানান্তর করার জন্য প্রাপকের নাম, হিসাব নাম্বার ও টাকার অংক উল্লেখ করে প্রাধিকার অর্পণ করেন। তখন এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে যে লেনদেন সংঘঠিত হয় তাকে বলে ইলেট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার বা ইএফটি। ইএফটিতে বা বৈদ্যুতিন তহবিল স্থানান্তর পক্রিয়া আন্তঃব্যাংক লেনদেন হলেও এর তদারক করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশে এই সেবাটি এখনো গ্রাহক পেতে শুরু করেনি।
মোবাইল ব্যাংকিং
সহজ কথায় মোবাইলের মাধ্যমে যে ব্যাংকিং করা তাই মোবাইল ব্যাংকিং। এসএমএস এর মাধ্যমে এই ব্যাংকের তথ্যগত লেনদেন সম্পন্ন হয় বলে একে এসএমএস ব্যাংকিংও বলে। সর্বপ্রথম ১৯৯৯ সালে ইউরোপের কয়েকটি ব্যাংক এটা চালু করে। মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ব্যাংকে একাউন্ট থাকার শর্তসাপেক্ষে এসএমএস এর মাধ্যমে প্রেরক প্রাপকের তথ্য ও ফোন নাম্বার বিনিময় করে অর্থ স্থানান্তর করা যায়। বাংলাদেশে মোবাইলে ব্যাংকিংএ আন্তঃব্যাংক লেনদেন সুবিধা চালু নেই এবং ইএসএসডি প্রাইসিং নিয়ে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তথাপি বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং বেশ জনপ্রিয়। বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ একটি বাংলাদেশী উদ্যোগ।
গিফট কার্ড বা গিফট ভাউচার
গিফট কার্ড বা গিফট ভাউচারকে গিফট টোকেন এবং গিফট সার্টিফিকেটও বলা হয়। এটা আসলেই শুধুমাত্র গিফট ভাউচার যা দিয়ে অনুমোদিত শপ থেকে নির্দিষ্ট অংকের পন্য সেবা কেনা যায়। এটা রিসেলার বা ব্যাংক এর পক্ষ থেকে ইস্যু করা হয়ে থাকে। এটা নগদ টাকা দিয়ে পন্য কেনার একটা বিকল্প মাধ্যম। সাধারণত কোম্পানীগুলো তাদের প্রমোশন এবং মার্কেটিং কৌশল হিসেবে গিফট ভাউচার অফার করে থাকে। কখনো কখনো ক্যাশব্যাক মার্কেটিং এর বিকল্প হিসেবে এর ব্যবহার দেখা যায়। এতে ইস্যুকারী কতৃপক্ষ তাদের গ্রাহকদের জন্য একটা উপহার অফার করে যা দিয়ে অনুমোদিত শপ থেকে উল্লেখিত অংক কেনাকাটা করতে গ্রাহককে নগদ অর্থ দিতে হয়না। অর্থের বদলে ভাউচার দিলেই হয়।
অনলাইনে পেমেন্ট
সাধারণ লেনদেনের সাথে এর পার্থক্য হচ্চে এই লেনদেন করার জন্য দাতা বা গ্রহীতাকে স্বশরীরে সাক্ষাত করতে হয়না। অনলাইন বা ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করে লোকেরা যেসব লেনদেন করে থাকে। তাকে অনলাইন পেমেন্ট বলে এ ধরনের ব্যবস্থায় ব্যাংকের সম্পৃক্ততা বা ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করা হয়। এত অর্থের একটা ভার্চুয়াল লেনদেন সংগঠিত হয়।
স্মার্ট কার্ড
স্মার্ট কার্ড হল নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাজে ব্যবহৃত কার্ড আকৃতির যাতে সমন্বিত বর্তনী বা Integrated circuit সংযুক্ত থাকে। স্মার্ট কার্ড মূলত দুই প্রকার – মেমরি কার্ড, যার মধ্যে নিরাপত্তাসূচক বর্তনী যুক্ত মেমরি বা স্মৃতি ভান্ডার থাকে, এবং মাইক্রোপ্রসেসর, যার মধ্যে মেমরি ছাড়াও মাইক্রোপ্রসেসর থাকে। সেলফোন এ ব্যবহৃত সিম কার্ড হলো এক ধরনের স্মার্ট কার্ড। অনলাইনে নিরাপদ লেনদেন ও ব্যাংকিং এর জন্য এ ধরনের স্মার্টকার্ড ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সেটা ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড হতে পারে। আমাদের দেশে বর্তমানে ন্যাশনাল আইডি কার্ডে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
এছাড়া অন্যান্য কার্ডগুলো নিয়ে আমাদের আলোচনা থাকবে অন্যকোনো সেশনে।